Table of Contents

সূচনা

জমির নথি আরেকটি সরকারী রেকর্ড। এই নথির সম্পূর্ণ শিরোনাম হল রেকর্ড অফ রাইটস বা সংক্ষেপে ROR। এর প্রত্যয়িত অনুলিপিকে পরচা, পর্চা বা জমির খতিয়ান বলা হয়। ট্র্যাভার্স সার্ভে, ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে, খানাপুরি বুজারত, প্রত্যয়ন, রেকর্ডের খসড়া, অভিযোগের নিষ্পত্তি, এবং চূড়ান্ত রেকর্ড প্রস্তুতকরণ এবং প্রকাশনা হল ROR তৈরির জন্য ব্যবহৃত কিছু পদ্ধতি।

এল.আর. খতিয়ান [c], আর.এস. খতিয়ান [RS Khatian], এবং সি.এস. খতিয়ান [CS Khatian] শব্দগুলোর অর্থ ঠিক কী?

বর্তমানে যে ধরনের স্বত্বলিপি প্রস্তুত করা হয় তাকে এলআর খতিয়ান বলে। যাকে ওয়ান ম্যান ওয়ান খতিয়ান অর্থাৎ ব্যক্তি পিছু একটি করে খতিয়ান বলে।  আর এই \”এলআর\”  কথার সম্পূর্ণ অর্থ হল  \”ল্যান্ড রিফর্মস\”।  এলআর খতিয়ান -এর পূর্বসূরী হলো আরএস খতিয়ান।  \”আরএস কথার পুরো অর্থ হল রিভিশনাল সার্ভে\”। এখানে উল্লেখ্য যে রাজারহাট ব্লকের কৃষ্ণপুর মৌজার  আরএস খতিয়ান সম্পর্কিত তথ্য নিখরচায় আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকে পেতে পারেন এবং এই খতিয়ানের কপি ডাউনলোডও করতে পারেন। যাই হোক, এই আরএস. খতিয়ানের পূর্বসূরি হল CS খতিয়ান এবং\”CS\” শব্দের সম্পূর্ণ অর্থ হল \”ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে\”।

পশ্চিমবঙ্গের জমির খতিয়ান বা পর্চা প্রস্তুতির পর্যায়গুলো কী কী?

যদিও ট্রাভার্স সার্ভে অফ ন্যাশনাল সার্ভিস সরকারি দপ্তরের আভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব ব্যাপার, তাসত্ত্বেও ছোট করে বলা যায় ভূমি সংস্কার আইনের 51 ধারা অনুযায়ীট্রাভার্স সার্ভেতে থিওডোলাইট ব্যবহার করে একটি মৌজা মানচিত্র তৈরি করা হয়। মৌজা মানচিত্র তৈরি করাটাই হল রেকর্ড করার প্রাথমিক পর্যায়। এখানে জানা দরকার একটা মৌজা কখনও কখনও একটি অথবা তার বেশি গ্রাম নিয়ে তৈরি হয় যেটা ভূমি আধিকারিকদের এলাকার জানবার একটি একক।
ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস খতিয়ান এর উপর নির্ভর করে ১৯৫৩  সাল থেকে ধাপে ধাপে  যে চূড়ান্ত রেকর্ড প্রস্তুত হয়েছিল তাকে রিভিশনাল সার্ভে বা আর এস রেকর্ড বা আরএস জমির খতিয়ান বলে। আর এস রেকর্ড বা আর এস খতিয়ানে একক জমির মালিক অথবা যৌথ মালিকগণের জমি সম্পর্কিত যাবতীয় বৃত্তান্ত একটি ফরমের আকারে লেখা থাকে,  যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১.  জমির মৌজার নাম,  ২. থানার নাম,  ৩. জেলার নাম,  ৪. খতিয়ান নাম্বার, ৫. জমিদারের নাম,  ৬. হারাহারি খাজনা, ৭. প্লট  নম্বর,  ৮. জমির শ্রেণী, ৯. মোট জমির পরিমাণ, ১০. মোট জমির মধ্যে মালিকের অংশের পরিমাণ ইত্যাদি। এই খতিয়ানের প্রত্যায়িত কপি বা প্রতিলিপি বা পর্চা সংশ্লিষ্ট ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তর এর নিকট দরখাস্ত করলে পাওয়া যায়। এবং এই শংসাপত্রের প্রতিলিপি, যা আরএস খতিয়ান বা আর.এস. পার্চা নামেও পরিচিত। 

কেবি খতিয়ান [KB Khatian] বা কেবি পর্চা কি?

রিভিশনাল সেটেলমেন্ট বা আরএস খতিয়ান এর উপর নির্ভর করে নতুন রেকর্ডিং কে বলা হয় খানাপুরি বুঝারত [KB]। খানাপুরি বলতে বোঝানো হয় দাগ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যাদি যেমন তার বর্তমান মালিক ও দাখালিকার সম্পর্কিত ভিন্ন তথ্যাদি, যার উপর ভিত্তি করিয়া শুনানি করা হয় এবং এক কথায় এই পদ্ধতিকে খানাপুরি বুঝারত বলা হয়। এই ধাপে \”এক ব্যক্তি, এক খতিয়ান\” [OMOK] ব্যবস্থা অনুসরণ করে জমির খতিয়ান তৈরি হয়, যাকে কেবি খতিয়ান  বা কেবি পর্চা বা ম্যানুয়াল পর্চা বলে।

ভূমি রেকর্ডে “প্রত্যয়ন” [Attestation] পর্যায় বলতে কী বোঝায় এবং মৌজার খসরা রেকর্ডের অর্থ কী?

খানাপুরি বুঝারত [KB] খতিয়ানের ভুল বা সমস্যা থাকলে অ্যাটস্টেশন [Attestation] পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আধিকারিকের নিকট জমাকৃত লিখিত আপত্তিসমূহ সকল পক্ষের শুনানি সাপেক্ষে উক্ত রাজস্ব আধিকারিক বিচার বিবেচনার মাধ্যমে নতুন সংশোধিত রেকর্ড প্রকাশ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, যেহেতু এই পর্যায়ে দাগের দখল ও মালিকানার সমর্থনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা প্রমাণপত্র যাচাই করে সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সংশোধিত খতিয়ান তৈরি হয়, সেহেতু তাহা আরো বাস্তবসংগত  ও সমস্যামুক্ত হয়।
যদি কোন প্লট পার্টিশন হয়ে থাকে, নতুন টুকরো প্লটটির  জন্য রেভিনিউ অফিসার নতুন প্লট নম্বর নির্ধারণ করেন। এই ক্ষেত্রে উত্তর সীমানার প্লটটির পুরানো নম্বর থাকে এবং নতুন প্লটটিকে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য নতুন নম্বর বা  বাটা দাগে চিহ্নিত করা হয়। অ্যাটেস্টেড  হওয়া সমস্ত খতিয়ানে রাজ্য সরকারকে আইনসম্মতভাবে দেয় সেস রেকর্ড করে সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসারকে কেবি খতিয়ানের সই করে তারিখ দিতে হয়। একটি মৌজার সমস্ত খতিয়ানের এটেস্টেশন হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসার মৌজার রেকর্ডের ড্রাফ্ট বা খসড়া প্রকাশনা করেন এবং পাবলিক নোটিশ দিয়ে জনগণকে বিনা পয়সায় ড্রাফ্ট বা খসড়া রেকর্ড দেখার তারিখ ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হয়।

ল্যান্ড রেকর্ডিং-এ “৩ ধারার কাজ” বলতে কী বোঝায়?

ড্রাফ্ট বা খসড়া রেকর্ড দেখার 30 দিনের মধ্যে কোন আপত্তি বা বিবাদ থাকলে তা নির্দিষ্ট ফর্মে (ফর্ম নং ৯) লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসারের নিকট বিস্তারিতভাবে আপত্তির বিষয়গুলি তুলে ধরতে হয়। সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসার বাদী ও বিবাদী সকলপক্ষের শুনানি করিয়া এবং জমি সংক্রান্ত স্বত্ব দখলের সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ পর্যালোচনা করে আদেশ প্রদান করেন। পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইনের ৫১ এ ধারার ১  নং উপধারা অনুযায়ী এই  আপত্তিসমূহের শুনানি হয়ে বিবেচনার পর নতুন রেকর্ড প্রকাশিত হয় এবং এই সংশোধিত রেকর্ডটিকে \”চূড়ান্ত প্রকাশিত\” রেকর্ড বা Finaly Published রেকর্ড (FP রেকর্ড) হিসাবে উল্লেখ করা হয়, এবং এই প্রক্রিয়া রেকর্ডটি সরল বাংলায় ৩ ধারার কাজ নামে পরিচিত, যাহা ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল টেনান্সি অ্যাক্ট হতে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে আসছে।

ভূমি রেকর্ডিং-এ \”7 ধারার কাজ\” (৭ ধারার কাজ) বলতে কী বোঝায়?

সংশোধিত চূড়ান্ত প্রকাশিত রেকর্ড জনগণকে নিখরচায় 30 দিনের  জন্য দেখার ব্যবস্থা করা হয় এবং এক বছর ধরে উক্ত চূড়ান্ত প্রকাশিত রেকর্ডের খতিয়ান সম্পর্কিত ওজর আপত্তি জানান জানানো যায়। যাহা নির্দিষ্ট ফর্মে (ফর্ম নং ৯) লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট  রিভিউ অফিসারের নিকট বিস্তারিতভাবে আপত্তির বিষয়গুলি তুলে ধরতে হয়। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের শুনানি ও জমির মালিকানার নথিপত্র, জমির খতিয়ান -এর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট রিভিউ অফিসার এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট রিভিউ অফিসার পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইনের ধারা 51A উপ-ধারা নং 4 অনুসারে এই আপত্তিগুলি শোনার পর রেকর্ডটি সংশোধন করেন এবং পরবর্তীতে সংশোধিত জমির খতিয়ান-এর একটি অনুলিপি প্রাসঙ্গিক ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব অফিস থেকে পাওয়া যায় ( BL & LRO) এবং এই প্রক্রিয়ার রেকর্ডটি সরল বাংলায় ৭ ধারার কাজ নামে পরিচিত, যা 1885 সালের বেঙ্গল টেন্যান্সি অ্যাক্টের পর থেকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে উল্লেখ্য যে উক্ত আপত্তির দরখাস্ত কোন কারনে বাতিল হলে অথবা বিপক্ষে রায় প্রদান করিলে উক্ত চূড়ান্ত রেকর্ড সম্বন্ধে কারো মনে ক্ষোভ থাকতে পারে। এর সুরাহার জন্য জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এর নিকট পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইনের ৫১ এ ধারার ৫ নং উপধারায় আপিলের ব্যবস্থা আছে।।

উপসংহার

জমি বিনিময় এবং মালিকানা পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। অতিরিক্তভাবে, গৃহ নির্মাণের জন্য আবাসন ঋণ বা বন্ধকী ঋণ, বিল্ডিং পরিকল্পনার অনুমোদন, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ট্যাক্স পরিশোধ এবং মিউটেশনের জন্য জমির খতিয়ান প্রয়োজন হয়।  এইকারণে যেখানে পূর্বোক্ত ধারাগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে, সেখানে ভূমি সংস্কার আইনের ধারা ৫০ ধারা অনুযায়ী ভূমি খতিয়ানে রেকর্ড পরিবর্তন বা অন্যান্য সংশোধনের জন্য অনলাইন মিউটেশনের আবেদন দাখিল করা যেতে পারে ।

Article : What are Land Khatian, Porcha [Parcha] and the 7 Stages of Land Records in West Bengal?

\"জমির

Legal Disclaimer

The information contained in this site is provided for informational purposes only, and should not be construed as legal advice on any subject matter.

You should not act or refrain from acting on the basis of any content included in this site without seeking legal or other professional advice. The contents of this site contain general information and may not reflect current legal developments or address your situation. We disclaim all liability for actions you take or fail to take based on any content on this site.

The operation of this site does not create an lawyer-client relationship between you and Ranjit Mondal and Associates. Any information sent to us via e-mail or through this site is not secure and will not be treated as confidential.

This site contains links to other web sites. We are not responsible for the privacy practices or the content of such web sites, and we do not endorse such sites.

Any reproduction of any content of this site is prohibited other than reproductions for individual, non-commercial, and informational use. This limited permission to recopy does not allow you to modify or incorporate any portion of the contents in any work or publication regardless of the medium. You may not recopy and share reproductions with a third party.